উপেন্দ্র নাথ ব্রহ্মচারী
আজ পনেরোই আগস্ট, আজ স্বাধীনতা দিবস।
সে বলল, সেটা আবার কি!
বললাম, জানিস না? ঊনিশশ সাতচল্লিশ সালে
আজকের দিনেই তো-
অত্যাচারী বৃটিশদের থেকে আমরা
পেয়েছিলাম মুক্তি- স্বাধীনতা।
সে বলল, স্বা-ধী-ন-তা! হা হা হা-
বললাম, হাসছিস যে?
সে বলল, স্বাধীনতা না ছাই!
একে বলে প্রভু বদল,
ছিল বিদেশী প্রভু, হলো দেশী।
বললাম, কি বলছিস যাতা?
সে বলল, কাকে বলে স্বাধীনতা?
বললাম, দেখছিস না আজ-
দিকে দিকে তিরঙ্গা, দিকে দিকে
বন্দেমাতরম আওয়াজ?
কান পেতে শোন, ভেসে আসছে
কতো স্বদেশী গান, কবিতা।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে বলল, বুঝলাম-
এটাই হলো তোর স্বাধীনতা!
বললাম, স্বাধীনতা মানে তো তাই!
সে বলল, চল তবে তোকে শোনাই--
যদি করো সরকারের সমালোচনা-
পাবে তুমি দেশদ্রোহী তকমা!
যে হবেনা সরকারের সঙ্গী,
রাতারাতি সে হয়ে যাবে জঙ্গী।
মুক্ত চিন্তার মানুষ হলে, ঠিকানা হবে-
তিহার জেলে।
নেতাদের, মন্ত্রীদের বিদেশী ব্যাঙ্কের
খাতা কালো টাকায় উপচে পরে,
তারাই আবার পতাকা তোলে,
দেশভক্তির বুলি ঝাড়ে।
পেটের জ্বালায় ট্রাফিক সিগন্যালে
যে বৃদ্ধ একটুকরো কাপড় হাতে
বাধ্য হয় বাবুদের গাড়ির-
কাঁচ পরিষ্কার করতে,
তার কাছে স্বাধীনতার মানে কি?
যে শিক্ষিত যুবক রিক্সা চালায়, করে হকারি-
তার কাছে স্বাধীনতার মানে কি?
ঋণের দায়ে যে কৃষক
আত্মহত্যার পথ বাছে,
তার কাছে কি এই স্বাধীনতার-
কোনো অর্থ আছে?
অভাবে, দারিদ্রে যে শিশুপেল না
শিক্ষার আলো
এই স্বাধীনতা তাকে কি দিলো?
বললাম, তবে স্বাধীনতা মানে কি?
সে বলল, স্বাধীনতা হলো-
খাদ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার,
বেকারত্ব, দুর্নীতি থেকে মুক্তি,
প্রতিটা নাগরিকের বলার অধিকার,
প্রত্যেকের চিকিৎসা পাবার অধিকার।
অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে রইলাম-
বললাম, ঠিকই তো, এটাই তো-
আসল স্বাধীনতা!
তুই কে? কি তোর ঠিকানা?
সে বলল, নিজের মধ্যে খুঁজে নে,
আমি তোর থেকে পৃথক কেউ না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন