পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নকশাল

নকশাল
         উপেন্দ্র নাথ ব্রহ্মচারী

গ্রামে এবার শিল্প হবে, ঘরে ঘরে চাকরি হবে-
হাসপাতাল হবে, বিদ্যুত হবে, রাস্তা হবে পাকা।
বটতলাতে বসেছে মিটিং, বলছেন নেতা-মন্ত্রী,
চাষে কি লাভ? এই জমি বেচে পাবে লক্ষ টাকা।
মুখটি করে কাঁচুমাচু উঠে দাঁড়াল বাগদি পাঁচু-
বলল, বাবু কি'করে বেচব পূর্বপুরুষের জমি?
এ যে নয় শুধু ক্ষেত, জড়িয়ে আছে বহু আবেগ,
অনেক স্মৃতি, অনেক আশা ছোট্ট এই ভূমি।
এদিক সেদিক চেয়ে নেতা উঠল চেয়ার ছেড়ে, 
মিটি মিটি হেসে বলল- ধুর বোকা! আবেগ কিরে?
আবেগ দিয়ে জমি আগলে জুটবে না তোর পেটের ভাত,
এর পরেও 'না' বললে, বুঝব তুই হাড় বজ্জাত।
ধমক মেশানো মিষ্টি কথায় শেষ হলো এই সভা;
লোভে-ভয়ে জর্জরিত গ্রামবাসীরা করবে কিবা!
পাঁচুর ছেলে রতনও সেই সভায় ছিল উপস্থিত-
শিক্ষার আলোয় উজ্জ্বল সে, বুদ্ধি তার প্রশ্নাতীত।
প্রখর বুদ্ধির মস্তিষ্ক তার বুঝল নয় এ সরল অতি,
নেতা মন্ত্রীর পকেট ভরবে, গ্রামের হবে চরম ক্ষতি।
সর্বনাশের গন্ধ পেয়ে রতন ডাকল সকলেরে-
শিল্পের নামে জমি মাফিয়া মোদের জমি নেবে কেড়ে।
শিল্প হবে না, চাকরি পাবে না, রাস্তা হবে না পাকা,
ওদের পকেট গরম হবে, মোদের পকেট ফাঁকা।
শিল্পের নামে জমি নিয়ে গড়বে ওরা আবাসন,
তার জন্যই করছে নাটক, দিচ্ছে লম্বা ভাষণ।
দেশের সম্পদ নিজের করো- এটাই ওদের মন্ত্র,
ওদের ফাঁদে পা দিও না, এই শিল্প-গল্প ষড়যন্ত্র।
গ্রামবাসীরা শপথ নাও, প্রাণের বাজি রেখে দাও-
মোদের জমি থাকবে মোদের জীবন তুমি যদিও নাও।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে এগিয়ে এলো জনে জনে,
শপথ নিল জমি রক্ষার মারলে মারুক ধনে-প্রাণে।
খবর গেল মন্ত্রিসভায় বেঁকে বসেছে গ্রামবাসীরা,
ওদের মাথা চিবিয়ে খাচ্ছে রতন নামের এক ছোকড়া।
এই না শুনে মন্ত্রীমশাই জ্বলে উঠলেন তেলে বেগুনে,
সব হিসাব মিটিয়ে নেবো পাই পাই গুনে গুনে।
পুলিশ কর্তার ডাক পরল, এলেন তিনি সত্বর,
থামাও ওকে, জেলে পোরো- ব্যাটা বড্ড মাতব্বর।
নকশাল বলে চালান করো, বছর কয়েক খাটুক জেল,
সারা গ্রাম দেখুক এটা তবেই ওদের হবে আক্কেল।
যেমন কথা তেমন কাজ- রতন হলো গ্রেফতার,
কার ঘারে কটা মাথা শাসকের চোখে চোখ রাখবার!

তদন্তকারী অফিসার কাঠগড়াতে এলেন,
সত্যি বলার শপথ তিনি গীতা ছুঁয়ে নিলেন।
বাদি পক্ষের উকিল করলেন প্রশ্ন তাঁকে-
আচ্ছা, নক্সাল বলে সন্দেহ কেন হলো রতনকে?
সন্দেহ নয় প্রমান আছে, এ ব্যাটা নির্ঘাত জঙ্গি,
মার্কস, এঙ্গেলসের লেখা বই এর সর্বক্ষণের সঙ্গী। 
উকিল মশাই জিজ্ঞাসা করলেন বইগুলো কি নিষিদ্ধ?
আমতা আমতা করে অফিসার হলেন ঘর্মাক্ত।
তা নয়, তবে এক মাও নেতার কাছে ছিল একই বই,
প্রমান এটা যথেষ্ট, এ ব্যাটা নকশাল নিশ্চয়ই।
কথায় কথায় বলে ব্যাটা 'লাল সেলাম কমরেড',
এসব কিছুই প্রমান করে ও নকশালদের সাগরেদ।
অফিসার, তা আপনি অন্তর্বাস পরেন অবশ্যই?
মাওবাদীরাও পরে, তাই আপনিও মাওবাদী নিশ্চয়ই।
এই ভাবেই উকিল মশাই কেটে দিলেন সব যুক্তি
সাজানো মামলা খারিজ হলো, রতন পেল মুক্তি।
সরকার থেকে প্রশাসন এরা সব সাম্রাজ্যবাদের দালাল,
গরীবের বুকে জ্বালিয়ে দিয়েছে আজ প্রতিবাদের মশাল।
গরীব মানুষের টুঁটি তোমরা যতই টিপে ধরবে,
ঘরে ঘরে এমন 'নকশাল' বারেবারে জন্মাবে।

সৈনিক

সৈনিক           উপেন্দ্র নাথ ব্রহ্মচারী   ছেলেটা গত কালই বাড়ি ফিরেছিল, ছ'মাস পর, মাঝে ছুটি পায়নি সে। ফুলসজ্জার পরের দিন চলে যেতে হয়েছ...