অন্ধ ধর্মবিশ্বাস ও নাস্তিকতা
উপেন্দ্র নাথ ব্রহ্মচারী
অন্ধ ধর্ম বিশ্বাস সর্বদাই ক্ষতিকর হয় তা সে বিশ্বাস বা আনুগত্য হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্টান বা নাস্তিকতা যার প্রতিই হোক না কেন। অনেকেই হয়তো প্রতিবাদ করে বলবেন যে নাস্তিকতা আবার কোনো ধর্ম নাকি! আমি বলব অবশ্যই, এটাও একটা ধর্ম।
ধর্ম আসলে কি? ধর্মের ব্যাখ্যা দু ভাবে করা যায়। এক, ন্যায় আর দুই, 'রিলিজিয়ন'। পৃথিবীতে যখন এই রিলিজিয়নের ধারনাটা ছিল না তখন ধর্ম বলতে 'ন্যায়' বা 'সত্য'কে বোঝানো হতো। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ছিল সত্যের বিরুদ্ধে অসত্যে লড়াই, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার লড়াই, এই কারনেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকে 'ধর্মযুদ্ধ' বলা হয়। পরবর্তীকালে রিলিজিয়নের ধারনা আসার পর ধর্মের সঙ্গা বদলে গেছে, ধর্ম হয়ে গেছে রিলিজিয়নের সমার্থক।
হিন্দুত্ব, ইসলাম, খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ প্রতিটা ধর্মের নির্দিষ্ট একটা মতবাদ আছে, যে মানুষ যে মতবাদে বিশ্বাসী তাকে সেই ধর্মাবলম্বী বলা হয়। ঠিক তেমনই নাস্তিকতারও নির্দিষ্ট কিছু অলিখিত নিয়মাবলী আছে, যে তা মেনে চলবে সেই নাস্তিক হবে। তাই নাস্তিকতাও অবশ্যই একটা ধর্ম।
সুতরাং এটা বোঝা যায় যে প্রতিটা মানুষ কোনো না কোনো ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি আস্থা রাখে এমন কি যে নিজেকে ধর্মহীন বলে দাবি করে সেও একটা ধর্মে বিশ্বাসী। কিন্তু একজন আদর্শ মানুষ সেই হয় যে এই ধর্মীয় বিশ্বাসের ঊর্দ্ধে উঠে মানুষকে তার মনুষ্যত্বের গুণে বিচার করে।
যখন কোনো ব্যক্তি কোনো ধর্মের প্রতি অন্ধের মতো আসক্ত হয়ে পরে তখন সে একটা নেশার ঘোরের মধ্যে থাকে আর সেই নেশা তার বাস্তব বোধবুদ্ধি নষ্ট করে দেয়। সে ভাবে তার ধর্মটাই জগতের শ্রেষ্ঠ আর বাকি সমস্ত ধর্ম ও ধর্মবিশ্বাস নিকৃষ্ট। সে তখন অন্য ধর্মাবলম্বীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, ঘৃণ্য ভাষায় আক্রমণ করে এমনকি শারীরিক আক্রমণ তথা হত্যা করতেও পিছপা হয় না।
এতদিন এই প্রবণতা হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ইত্যাদি ধর্মাবলম্বীদের ধর্মান্ধদের মধ্যে লক্ষ্য করা যেত কিন্তু এখন এই একই প্রবণতা উদার চিন্তার মানুষ বলে পরিচিত নাস্তিক ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। যা আমাকে ভীষণ আশ্চর্য করে।